অফিস ডেস্ক
নওগাঁর মান্দা উপজেলা মৈনম-গনেশপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ। ছবি: সংগৃহীত
অনিয়ম দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে নওগাঁর ভূমি অফিসগুলো। জমি খারিজ, খাজনা প্রদান, নামজারি রেকর্ড সংশোধনসহ সব ক্ষেত্রেই টাকা ছাড়া মেলে না কোনো সেবা। জমির পরিমাণ দেখে হয় টাকার চুক্তি। আর অবৈধ টাকা লেনদেন হয় অফিসে বসেই।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, অফিসের নিয়োগ করা দালাল ছাড়া কোনো কাজ নিয়ে গেলেই অসংগতির যেন শেষ নেই। আবার সেই কাজই হচ্ছে টাকা দিলেই।
এ দিকে জেলা প্রশাসনের হুঁশিয়ারি, ভূমি অফিসে অনিয়মের প্রমাণ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হবে।
গোপনে ধারণ করা ভিডিওতে ভূমি অফিসে জমি খারিজের জন্য আসা আব্দুল কুদ্দুসকে অফিস সহকারী রিনা পারভিনকে বলতে শোনা যায়, ‘কালকে আসেন বলবোনি। ট্যাকার একটা ব্যাপার আছে না। আজকে তো পারমো না। মঙ্গলবার না হয় বুধবারে আসেন।’
এরপর তিন হাজার টাকা গ্রহণ করেন ভুক্তভোগী আব্দুল কুদ্দুসের কাছ থেকে রিনা পারভিন।
আব্দুল কুদ্দুস জানান, জমি খারিজের জন্য গত ৪ মাস ধরে এ অফিসে যাতায়াত করছেন তিনি। টাকার জন্য তার কাজ আটকে রাখা হয়েছে। জমি খারিজের জন্য এভাবে অর্থের চুক্তি শেষে নগদ টাকা হাতে গুনে নেন নওগাঁর মান্দা উপজেলা মৈনম-গনেশপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী রিনা পারভিন।
এভাবে জেলার ১১টি উপজেলার তৃণমূল ভূমি অফিসগুলোতে চলছে অনিয়মের রাজত্ব। জমির খাজনা বা ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান, ভূমি খারিজ, মালিকানা সংশোধনসহ বিভিন্ন সেবার জন্য এসব ভূমি অফিসে আসেন মানুষ।
অভিযোগ রয়েছে, অফিস কর্মকর্তাদের নিয়োজিত দালালের বাইরে খাজনা খারিজের কাগজ জমা দিলেই দিনের পর দিন হয়রানীসহ অন্তহীন সমস্যায় পড়তে হয়। আবার সেই কাজই হচ্ছে নির্ধারিত টাকা হাতে পেলেই।
মৈনম ভূমি অফিসে বেশ কজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা হয়। তারা অভিযোগ করেন, কোনো টাকা ছাড়া এ অফিসে কাজ হয় না। ভূমি অফিসের এ অবৈধ লেনদেনে অফিস সহকারী থেকে কর্মকর্তাদের জড়িত রয়েছেন বলে অভিযোগ তাদের।
তবে এমনটা মানতে নারাজ এসব কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে মৈনম গনেশপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস সহায়ক রিনা পারভিন বলেন, ‘না আমি টাকা নেইনি। আমি আপনার কাছ থেকে শুনলাম।’
এ বিষয়ে ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা মাহফুজার রহমান বলেন, ‘আমি ৫ মাস আগে এ অফিসে যোগ দিয়েছি। আসার পর চেষ্টা করছি অনিয়ম দূর করার।’
ভূমি সেবা তৃণমূল মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ভূমি মেলাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে জেলা প্রশাসন। তবে ভূমি সেবা নিয়ে কোনো অনিয়মের প্রমাণ পেলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দেন জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল।
নওগাঁয় ৯৯টি ইউনিয়নে ভূমি সেবার অফিস রয়েছে ৬১টি। এর অন্তত ১০টি খাত রয়েছে ; যে খাতের সেবার জন্য তৃণমূল পর্যায়ে সেবাপ্রত্যাশীরা আসছেন। কিন্তু এখানকার যে কর্মকর্তা রয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অনৈতিক লেনদেনের নানা অভিযোগও রয়েছে। এসব অভিযোগ উত্তরণের দাবি করছেন ভুক্তভোগীরা।