অফিস ডেস্ক
তিন দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে এই কর্মসূচি পালিত হয়। দুপুর সাড়ে ১২টায় একই স্থানে শিক্ষার্থীরা সার্বিক বিষয়ে একটি প্রেস ব্রিফিং করেন।
লিখিত বক্তব্যে শিক্ষার্থীরা বর্তমান প্রকৌশল সেক্টরে বিদ্যমান বৈষম্যের একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরেন।
তাদের অভিযোগ, নিয়মবহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত পদোন্নতির কারণে বিএসসি প্রকৌশলীদের এন্ট্রি লেভেলের পদসংখ্যা সংকুচিত হচ্ছে। ডিপ্লোমাধারী উপ-সহকারী প্রকৌশলীদের অভ্যন্তরীণ কোটার মাধ্যমে সহকারী প্রকৌশলী (৯ম গ্রেড) পদে অতিরিক্ত পদোন্নতি দেওয়ায় বিএসসি প্রকৌশলীদের জন্য এই পদের নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ কমে যাচ্ছে। এমনকি, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরেও তা বাতিল করে ডিপ্লোমাধারী উপ-সহকারী প্রকৌশলীদের পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠানে পদোন্নতির হার শূন্য পদের ৩৩% উল্লেখ থাকলেও, তা লঙ্ঘন করে ৪০% থেকে ১০০% পর্যন্ত পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে, যা সংবিধানের 'সুযোগের সমতা' নীতির পরিপন্থী।
শিক্ষার্থীরা আরো উল্লেখ করেন, বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও কেবল কোটার মাধ্যমে অনেক ডিপ্লোমাধারী ব্যক্তি ৯ম গ্রেডের সহকারী প্রকৌশলী (বিসিএস ক্যাডার) পদে পদোন্নতি পাচ্ছেন এবং বিসিএস প্রকৌশল ক্যাডারের সদস্যদের ওপর কর্তৃত্ব স্থাপন করছেন। উদাহরণস্বরূপ, ৪৭তম বিসিএসে সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) পদে মাত্র একটি পদ থাকলেও, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের স্মারক অনুযায়ী মোট ২৯ জন উপ-সহকারী প্রকৌশলীকে সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) পদে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এটিকে বিএসসি প্রকৌশলীদের পেশাগত অধিকার হরণ এবং প্রকৌশল পেশাকে মর্যাদাহীন করার একটি গভীর ষড়যন্ত্র বলে তারা অভিহিত করেন।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, উপ-সহকারী প্রকৌশলী (১০ম গ্রেড) পদে শুধুমাত্র ডিপ্লোমাধারীরা আবেদন করতে পারেন।
বাংলাদেশ ন্যাশনাল কোয়ালিফিকেশনস ফ্রেমওয়ার্ক (BNQF) অনুসারে ডিপ্লোমা ডিগ্রি বিএনএফকিউ লেভেল ৬ এর অন্তর্ভুক্ত, যেখানে বি.এস.সি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি বিএনএফকিউ লেভেল ৭ এর। নিম্নতর লেভেলের ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারী প্রার্থীরা আবেদন করতে পারলেও, উচ্চতর লেভেলের বি.এস.সি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রিধারী শিক্ষার্থীরা এই পদে আবেদনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, যা প্রতিবেশী দেশগুলোতে দেখা যায় না।
এছাড়াও, "প্রকৌশলী" পদবির অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের বিষয়েও তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। গেজেট অনুসারে শুধুমাত্র বি.এস.সি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রিধারীরা এই পদবি ব্যবহার করতে পারেন, কিন্তু মাঠপর্যায়ে তা মানা হচ্ছে না।
শিক্ষার্থীরা এই বৈষম্যের অবসান ঘটাতে তিনটি সুনির্দিষ্ট দাবি পেশ করেন
১. ইঞ্জিনিয়ারিং ৯ম গ্রেড বা সহকারী প্রকৌশলী বা সমমান পদে প্রবেশের জন্য সবাইকে পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে এবং বি.এস.সি ডিগ্রিধারী হতে হবে।
কোটার মাধ্যমে কোনো পদোন্নতি নয়, এমনকি অন্য নামে সমমান পদ তৈরি করেও পদোন্নতি দেওয়া যাবে না।
২. টেকনিক্যাল ১০ম গ্রেড বা উপ-সহকারী প্রকৌশলী বা সমমান পদ সবার জন্য উন্মুক্ত করতে হবে, অর্থাৎ ডিপ্লোমা ও বি.এস.সি উভয় ডিগ্রিধারীদেরকে পরীক্ষার সুযোগ দিতে হবে।
৩. বি.এস.সি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি ছাড়া কেউ 'ইঞ্জিনিয়ার' পদবি ব্যবহার করতে পারবে না, এই মর্মে আইন পাশ করে গেজেট প্রকাশ করতে হবে।
শিক্ষার্থীরা আশা প্রকাশ করেন, প্রধান উপদেষ্টার সুদৃষ্টি ও দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে চলমান এই বৈষম্যের অবসান ঘটবে এবং মেধার স্বীকৃতি প্রতিষ্ঠিত হবে।