৪ বছর থেকে ঘরবন্দি লিজা এসএসসিতে পেয়েছিল জিপিএ-৫, সৎমা বললেন ‘আমিও বন্দি’

অফিস ডেস্ক
প্রতিবেদন প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০২৫ | সময়ঃ ০২:৪৫
photo

জয়পুরহাটের আক্কেলপুর পৌরসভার মণ্ডলপাড়ায় বড় মেয়ে পালিয়ে বিয়ে করায় ছোট মেয়েকে ৪ বছর ধরে ঘরে তালাবদ্ধ করে রেখেছিলেন এক বাবা। দীর্ঘদিন এক ঘরে বন্দি থাকায় ওই তরুণী মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।

 

গত শনিবার (২৬ জুলাই) জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর সেদিন সন্ধ্যায় স্থানীয়দের সহযোগিতায় বন্দি ওই তরুণীকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওই তরুণীর বাবা এনামুল হক ও সৎমা ফুতি বেগমের বিরুদ্ধে তাকে আটকে রেখে মানসিকভাবে নির্যাতন চালানোর অভিযোগ উঠেছে।


অভিযুক্ত এনামুল হক আক্কেলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সাবেক মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট। এর পাশাপাশি তিনি উপজেলার জাফরপুর বাজারেও চেম্বার বসিয়ে রোগী দেখেন।

জানা যায়, ওই তরুণীর নাম লিজা আক্তার। সে ২০২১ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছিল।


তাকে একটি অন্ধকার, স্যাঁতসেঁতে ঘরে দিনের পর দিন বন্দি করে রাখা হয়। তাকে নিয়মিত দেওয়া হত চেতনানাশক ইনজেকশন। তাকে উদ্ধারের পর চিকিৎসার নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ।
প্রতিবেশীদের অভিযোগ, মেয়েটির চিৎকার প্রায়ই শোনা যেত, কিন্তু কাউকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হত না।


স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, বড় মেয়ে প্রেম করে পালিয়ে বিয়ে করায় ছোট মেয়েটির ক্ষেত্রেও একই ভয় থেকে এনামুল তার ছোট মেয়ের পড়াশোনা বন্ধ করে দেন। তাকে ঘরবন্দি করে রাখতেন। এ ছাড়া চেতনানাশক ইনজেকশন দিয়ে রাখা হত। এর প্রতিবাদ করলেই করা হত মারধর।

রাসিক জনি নামের এক প্রতিবেশী বলেন, ‘মেয়েটিকে ঘরবন্দি করে বাবা ও সৎমা মিলে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতেন।


অনেক সময় তার মাথাও ন্যাড়া করে দেওয়া হত।’


পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, লিজা যে ঘরটিতে বন্দি ছিল সেখানে ছিল মাত্র একটি ছোট ফ্যান ও একটি বাতি। ঘরের দরজা-জানালা বাইরে থেকে পেরেক মারা ছিল। এ ছাড়া বাড়ির পরিবেশ ছিল অস্বাস্থ্যকর ও বাতাসহীন।

 

সৎমা ফুতি বেগম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি নিজেও ঘরবন্দি। স্বামী বাইরে যেতে দিতেন না। আমি মেয়ের দেখাশোনা করতাম।’ তবে তিনি নির্যাতনের কথা অস্বীকার করেন।

 

লিজার বাবা এনামুল হক বলেন, ‘আমার বড় মেয়ে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করায় মান-সম্মান নষ্ট হয়েছে। ছোট মেয়ে যাতে পালিয়ে না যায় সেজন্য তাকে বাইরে যেতে দেইনি। ছেলেরা জানালা দিয়ে বিরক্ত করত, তাই জানালাগুলো বন্ধ করে দেই।’

 

আক্কেলপুর থানার এসআই গণেশ চন্দ্র বলেন, ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মেয়েটিকে দীর্ঘদিন আটকে রাখা হয়েছিল। তাকে মুক্ত করে উন্নত চিকিৎসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাদের বাড়িতে প্রতিবেশীদের প্রবেশে বাধা না দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

শেয়ার করুন