জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে যেন চুরির বন্যা বইছে। দিনে রাতে কোথাও যেন নিরাপত্তা নেই। কখনো দোকানে, কখনো ঘরে, আবার কখনো ফসলের মাঠের বৈদ্যুতিক মিটার এবং ট্রান্সফর্মার চুরিতে চোরের দাপট। গত দেড় মাসে ২১টি চুরির লিখিত অভিযোগ থানায় জমা পড়েছে।
তবে এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে আটক হয়নি কেউ, উদ্ধার হয়নি কোনো মালামাল।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, থানাতে অভিযোগ করার পরেও গুরুত্ব দিচ্ছে না পুলিশ।
গত বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) রাতে উপজেলার তিলকপুর বাজারে দুটি কীটনাশকের দোকানের টিন কেটে একটি দোকান থেকে প্রায় দেড় লক্ষ টাকার কীটনাশক চুরি করা হয়েছে। সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে চুরি করার সেই দৃশ্য।
এই ঘটনায় ওই দোকান মালিক সাধারণ ডায়েরি করার উদ্দেশে থানায় এলে নেওয়া হয়েছে লিখিত অভিযোগ।
একাধিক ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চুরির খবরে আক্কেলপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ভুক্তভোগীদের থানায় এসে লিখিত অভিযোগের পরামর্শ দিয়ে আসেন। অনেক সময় থানা পর্যন্ত আসেন না ভুক্তভাগীরা।
আক্কেলপুর থানা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, গত দেড় মাসে (জুন ও জুলাই) থানায় চুরি ও দস্যুতার ঘটনায় ২১টি লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে, মামলা হয়েছে ২টি।
সব মিলিয়ে এর সংখ্যা দাঁড়ায় ২৩টি। এর মধ্যে জুন মাসে লিখিত অভিযোগ ১১টি ও দস্যুতা মামলা ১টি এবং জুলাই মাসের ১৯ তারিখ পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ হয়েছে ১০টি ও মামলা হয়েছে ১টি।
আরো জানা গেছে, জুলাই মাসের স্বর্ণ চুরির মামলায় ৩ জন গ্রেপ্তার হলেও উদ্ধার হয়নি কোনো মালামাল। অন্য ২২টি ঘটনায় ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে অপরাধীরা।
স্থানীয়দের জানান, তারা দিনে ও রাতে চোর আতঙ্কে রয়েছেন।
অপরাধীরা অনেক সময় বাসাবাড়ি থেকে লোকজন থাকা সত্ত্বেও দিনে ও রাতে চুরি করছে। এতে যেকোনো সময় ঘটতে পারে অপ্রীতিকর বড় রকমের কোনো ঘটনা। থানা পুলিশ ও প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
ভুক্তভোগী আক্কেলপুর কলেজ বাজারের ব্যবসায়ী রতন হোসেন বলেন, ‘প্রধান সড়কের পাশে আমার কনফেকশনারির দোকান। বাজারে নিয়মিত নাইট ডিউটি হওয়া সত্ত্বেও গত ২৮ তারিখ রাতে আমার দোকানের টিন কেটে নগদ টাকা চুরি করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছি। তবে এখনো কোনো সমাধান পাইনি।’
ভুক্তভোগী তিলকপুর বাজারে কীটনাশক ব্যবসায়ী আহমেদ আলী বলেন, ‘চুরির ঘটনার দিন সকালে পুলিশ আমার দোকানে এসেছিল। পরে আমি থানায় জিডি করতে গেলে আমার কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ নেওয়া হয়েছে। এরপরে আর কোনো খোঁজ নেয়নি পুলিশ। আমি থানায় ফোন দিয়েছিলাম, তারা শুধু বলেন দেখছি।’
আক্কেলপুর এফ ইউ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালাম মন্ডল বলেন, ‘আক্কেলপুরে প্রতিনিয়ত চুরির ঘটনা ঘটছে। এ সব চুরির ঘটনা রোধে সব এলাকায় পুলিশি টহল বাড়ানোর পাশাপাশি চিহ্নিত অপরাধীদের প্রতি আরো নজরদারি বাড়ানো উচিত।’
আক্কেলপুর থানার ওসি মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘চুরি রোধে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। নিয়মিত অভিযানও পরিচালনা করছি।’