অফিস ডেস্ক
তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত মওলানা ভাসানী সেতু উদ্বোধনের পর থেকেই অন্ধকারে ডুবে আছে। ২০ আগস্ট উদ্বোধনের রাতেই সেতুর বৈদ্যুতিক কেবল চুরি যাওয়ার ঘটনায় পাঁচ রাত ধরে ল্যাম্পপোস্টের কোনো বাতি জ্বলছে না। এর মধ্যে চুরি হয়ে গেছে সেতুর রিফ্লেকটর লাইটও।
প্রায় ৯২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর থেকে কুড়িগ্রামের চিলমারী পর্যন্ত তিস্তা নদীর ওপর এ সেতু নির্মাণ করা হয়।
গত ২০ আগস্ট এর উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিদিন হাজারো যাত্রী ও যানবাহন এ সেতু দিয়ে চলাচল করলেও সন্ধ্যার পর সেতুসহ উভয় দিকের সংযোগ সড়ক অন্ধকারে ঢাকা পড়ে। নেই কোনো নিরাপত্তাব্যবস্থা। এরই মধ্যে সেতু পার হতে গিয়ে একজন নারী প্রাণ হারিয়েছেন।
আহত হয়েছেন কয়েকজন।
স্থানীয় সমাজসেবক বাহারউদ্দিন মানিক বলেন, ‘দুই লেনের সেতুর পাশে খাবারসহ নানা পণ্যের ভ্রাম্যমাণ দোকান বসেছে। এতে সড়ক সরু হয়ে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। কোথাও কোনো নিয়ম মানা হচ্ছে না, পুলিশও থাকে না।
দুর্ঘটনার পাশাপাশি চুরি, ছিনতাই এমনকি ডাকাতির মতো ঘটনাও ঘটতে পারে।’
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, উদ্বোধনের দিন এক বৃদ্ধা সড়ক পার হতে গিয়ে প্রাণ হারান। আহত হন আরো কয়েকজন। রবিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মোটরসাইকেল ও অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে গুরুতর আহত হন তিন যুবক। সবাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
সেতুতে আলো না থাকায় দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সেতুর পাশে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘উদ্বোধনের আগেই সেতুর বিদ্যুতের তার চুরি হয়েছে। পরে জেনারেটর ব্যবহার করে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান চালানো হয়। কর্তৃপক্ষ আগেই বিষয়টি জানত।’ তিনি জানান, উদ্বোধনের দিন সন্ধ্যায় দেখা যায়, সেতুর চিলমারী প্রান্তে কিছু লাইট জ্বললেও হরিপুর অংশে অন্তত ৫০টি ল্যাম্পপোস্ট অন্ধকারে ছিল।
স্থানীয় তরুণ আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘পরদিন সকালে সংযোগ সড়কের দুটি ল্যাম্পপোস্টের গোড়ায় মাটি খুঁড়ে তার কেটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তা এলাকাবাসীর নজরে আসে। এর পরও কোনো নিরাপত্তা জোরদার না করায় সেতুর সব রিফ্লেক্টর লাইটও চুরি হয়ে গেছে। এসব ঘটনায় পরিকল্পিত কোনো ষড়যন্ত্র থাকতে পারে।’
এ বিষয়ে গাইবান্ধা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জ্বল চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রিফ্লেকশন লাইট চুরির খবর লোকমুখে জেনেছি। কেবল চুরির ঘটনায় সুন্দরগঞ্জ থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা হয়েছে। সেতুর সিকিউরিটি ইনচার্জ নুর আলম বাদী হয়ে গত শুক্রবার রাতে মামলাটি করেন। পুলিশ দুষ্কৃতকারীদের ধরার চেষ্টা করছে। প্রায় ৩১০ মিটার বিদ্যুতের তার চুরি হয়েছে, যার বাজারমূল্য প্রায় পাঁচ লাখ টাকা।’ তিনি জানান, নতুন করে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। উল্লেখ্য, এক হাজার ৪৯০ মিটার দীর্ঘ ও ৯.৬ মিটার প্রস্থের সেতুটি বাংলাদেশ সরকার (জিওবি), সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এসএফডি) এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ওফিড) অর্থায়নে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) বাস্তবায়ন করেছে। সেতুর উভয় প্রান্তে রয়েছে ৮৬ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক। তবে সংযোগ সড়কের কিছু অংশের কাজ এখনো শেষ হয়নি।