অফিস ডেস্ক
প্রতিবেদন প্রকাশ: ১২ আগস্ট ২০২৫, সময়ঃ ০৪:২৮
আমন মৌসুমের শুরুতেই গাইবান্ধায় কৃষকদের কাছে অতিরিক্ত দামে সার বিক্রির অভিযোগ উঠেছে ডিলারদের বিরুদ্ধে। নিয়ম অনুযায়ী ক্যাশ মেমো দিয়ে সার বিক্রি করার কথা থাকলেও তা মানছেন না অনেক ডিলার। অভিযোগ রয়েছে, সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি বস্তায় ২০০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত বেশি নিচ্ছেন তারা।
সরেজমিনে গাইবান্ধা সদর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নের ফলিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, জানু মিয়া ও তার স্ত্রী রাশেদা বেগম জীবিকার খরচ বাঁচাতে নিজেরাই আমন ধানের জমিতে কাজ করছেন। কিন্তু সারের বাড়তি দামে তাদের কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ। মৌসুমের শুরুতেই স্থানীয় বাজার থেকে সরকারি দামের চেয়ে কেজি প্রতি ৫ থেকে ৭ টাকা বেশি দিয়ে সার কিনতে হচ্ছে, যা উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে।
কৃষক দম্পতি জানান, সদরের বোয়ালী ইউনিয়নের খেয়াঘাট বাজারের আনছার আলীর দোকান থেকে তারা ডিএপি সার কিনেছেন কেজি প্রতি ২৭ টাকায় এবং এমওপি সার ২৫ টাকায়। কিন্তু সরকারি দামে সার চাইলে ডিলার তা দিতে রাজি হননি।
একই অভিযোগ করেছেন ওই এলাকার কৃষক সৈয়দ আলী ও মধু মিয়া। তারা বোয়ালীর সার ডিলার ‘মেসার্স সবুর এন্ড ব্রাদার্স’ থেকে এমওপি সার কিনেছেন প্রতি বস্তা ১ হাজার ২৫০ টাকায় এবং ডিএপি সার কিনেছেন ১ হাজার ১৫০ টাকায়। তবে সরকারি দামে সার ও ক্রয় রশিদ চাইলে সার দেয়া যাবে না বলে জানান ডিলার।
একই এলাকার নওশাদ আলী জানান, শহরের পুরাতন বাজারের সার ডিলার মোজ্জামেল হাজীর দোকান থেকে এমওপি সার কিনেছেন প্রতি বস্তা ১ হাজার ১০০ টাকায় এবং ডিএপি সার কিনেছেন ১ হাজার ২০০ টাকায়। সারের সংকট চলছে, তাই এর কম দামে বিক্রি করা যাবে না বলে জানিয়েছেন দোকানের ম্যানেজার।
তাদের অভিযোগ, বোয়ালী ইউনিয়নের খেয়াঘাট, পুলিশ লাইনস ও শহরের পুরাতন বাজারের ডিলাররা সরকারি নির্ধারিত দামে সার বিক্রি না করে অতিরিক্ত দাম নিচ্ছেন। তাদের মনগড়া দাম না দিলে সার দেয়া হচ্ছে না। ক্রয় রশিদ চাইলে জানিয়ে দেয়া হচ্ছে-সার নেই। ফলে বাধ্য হয়ে বেশি দামে সার কিনতে হচ্ছে।
বোয়ালীর মতো একই অবস্থা জেলার বিভিন্ন জায়গায়ও। কৃষকদের অভিযোগ, কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে ডিলার ও খুচরা বিক্রেতারা সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক বেশি দামে সার বিক্রি করছেন। বিশেষ করে ধান রোপণের মৌসুমে বেশি প্রয়োজনীয় ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি), মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) ও ডায়ামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) সারের দাম বেড়ে গেছে।
সরকারিভাবে ৫০ কেজি টিএসপি সারের দাম ১ হাজার ৩৫০ টাকা হলেও বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়। ডিএপি সারের দাম ১ হাজার ৫০ টাকা নির্ধারণ থাকলেও বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩৫০ টাকা বা তারও বেশি দামে। আর এমওপি সারের দাম ১ হাজার টাকা হলেও বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২৫০ টাকায়।
গাইবান্ধায় কৃষকদের কাছ থেকে সারের দাম বেশি নিলেও বেশিরভাগ ডিলার কোনো রসিদ দিচ্ছেন না। কেউ কেউ দিলেও তাতে সরকার নির্ধারিত দামই দেখানো হচ্ছে। সার কিনতে গেলে ডিলার ও খুচরা বিক্রেতারা সংকটের কথা বললেও, বেশি দাম দিলেই সার মিলছে। অনেক ডিলার আবার দোকানের সরকারি মূল্য তালিকা ঢেকে রাখছেন।
এতে ন্যায্যমূল্যে সার না পেয়ে হতাশ কৃষকরা উৎপাদন খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। কেউ চাহিদার অর্ধেক সার কিনতে পারছেন, কেউবা বাধ্য হয়ে গোবর সার ব্যবহার করে চারা রোপণ করছেন।
অতিরিক্ত দাম নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে ডিলারদের দাবি, খুচরা ব্যবসায়ীরা বেশি দামে সার বিক্রি করছে, আর সেই দায় এসে পড়ছে তাদের ওপর। তবে খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ডিলাররা বস্তাপ্রতি অতিরিক্ত দাম নেয়া খুচরায়ও বেশি নিতে হচ্ছে। এতে কৃষকরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
অভিযোগের বিষয়ে মেসার্স সবুর অ্যান্ড ব্রাদার্সের ডিলার সবুর মিয়া বলেন, খুচরা বিক্রেতারাই বেশি দামে বিক্রি করছে, কিন্তু দায় তাদের ঘাড়েই পড়ছে। অন্যদিকে খুচরা ব্যবসায়ী আরিফ মিয়ার অভিযোগ, সরকার নির্ধারিত দামে সার সরবরাহ করলে দাম বাড়ত না। ডিলাররা বস্তাপ্রতি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বেশি দাম নিচ্ছে, যার কারণে কেজিতে ১-২ টাকা বেশি নিতে হচ্ছে এবং এতে কৃষকরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. খোরশেদ আলম জানান, জেলায় সারের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি বা অতিরিক্ত দাম নিলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। কৃষকের কাছে সরকারি মূল্য ও চাহিদামতো সার পৌঁছাতে নিয়মিত মনিটরিং চলছে। অভিযোগ পেলে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, চলতি মৌসুমে গাইবান্ধায় ১ লাখ ৩৩ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
© North Bangla News ২০২৫ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
সতর্কতাঃ অনুমতি ব্যতীত কোন সংবাদ বা ছবি প্রকাশ বা ব্যবহার করা যাবে না।