অফিস ডেস্ক
প্রতিবেদন প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০২৫, সময়ঃ ০৩:৪৯
শ্যালো পাম্পে পানি তুলে আমন রোপণ ও ধানের চারা বাঁচাতে প্রাণপণ চেষ্টা কৃষকদের।
অনাবৃষ্টিতে মৌসুম পেরিয়ে গেলেও রংপুর অঞ্চলের চাষিরা এখনো ধান রোপণ করতে পারছেন না। রোপা আমন ধান মূলত বৃষ্টিনির্ভর হলেও এবছর কৃষকদের সেচের ওপর নির্ভর করেই আবাদ করতে হচ্ছে, ফলে পড়ছে অতিরিক্ত খরচ। তবে কৃষি বিভাগের দাবি, ফলন ভালো হলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রোপা আমনের ভরা মৌসুমেও একরের পর একর জমি খালি পড়ে আছে। বর্ষাকালেও মাঠে জমেনি প্রয়োজনীয় পরিমাণ বৃষ্টির পানি। তাই সেচ পাম্প চালিয়ে জমি তৈরি করছেন কৃষকরা। এতে প্রতি হেক্টরে চারা রোপণের খরচই বেড়ে গেছে দুই হাজার টাকার বেশি।
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার জয়রামপুর আনোয়ার গ্রামের কৃষক কচি মুদ্দিন বলেন, ‘বৃষ্টি নেই, আছে শুধু রোদ, ঘাম আর বাড়তি খরচের বোঝা। জমি ফেটে যাচ্ছে, চারা শুকিয়ে যাচ্ছে। শ্যালো পাম্পে পানি তুলে আমন রোপণ ও ধানের চারা বাঁচাতে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি বাবা।’
এ অবস্থায়ও আশাবাদী কৃষি বিভাগ। রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমন ধান বৃষ্টিনির্ভর ফসল। কৃষকরা বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করছেন। বৃষ্টি যে কোনো সময় হতে পারে, তবে তা অনিশ্চিত। চারার বয়স ঠিক রাখতে এবং ফলন ভালো করতে সেচ দিয়ে যথাসময়ে রোপণের পরামর্শ দিচ্ছি।’
রংপুর কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা ও নীলফামারী এই পাঁচ জেলায় চলতি মৌসুমে আমন ধান রোপণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ লাখ ২০ হাজার ৩৪০ হেক্টর। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে চারা রোপণ শুরু হয়ে চলবে আগস্টের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত।
তবে কৃষকদের ভাষ্য, ভরা বর্ষা আর আমনের মৌসুমে এবার বৃষ্টি নেই বললেই চলে। প্রতি হেক্টরে সেচ দিয়ে চারা রোপণে খরচ হচ্ছে গড়ে ২ হাজার টাকার বেশি। ইতোমধ্যে ২৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হয়েছে। মৌসুম শেষে বৃষ্টি না হলে এই খরচ দাঁড়াতে পারে প্রায় ১২৪ কোটি ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকায়।
সম্প্রতি অন্তত ১০টি মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, বৃষ্টিহীন অবস্থায়ও ডিজেলচালিত শ্যালো ও সেচ পাম্প দিয়ে আমন রোপণে ব্যস্ত কৃষকরা। কেউ জমিতে চারা রোপণ করছেন, কেউবা রোপণ করা চারায় পানি দিয়ে তা বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ‘জুলাইয়ে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৪৬৪ মিলিমিটার, কিন্তু এ বছর এখন পর্যন্ত মাত্র ১৯৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। প্রয়োজনীয় পরিমাণ বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষকদের জমিতে কৃত্রিমভাবে সেচ দিতে হচ্ছে। জুলাইয়ের বাকি সময়ে উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। তবে মাঝে মাঝে হালকা বৃষ্টি হতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাতাসে জলীয় বাষ্প বেশি থাকায় ভ্যাপসা গরম থাকবে। গত বছর জুলাইয়ে বৃষ্টিপাত হয়েছিল ৪৫৫ মিলিমিটার, এবার তা কমে হয়েছে মাত্র ২০০ মিলিমিটার।’
উল্লেখ্য, রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় চলতি মৌসুমে আমন ধান রোপণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ লাখ ২০ হাজার ৩৪০ হেক্টর।
© North Bangla News ২০২৫ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
সতর্কতাঃ অনুমতি ব্যতীত কোন সংবাদ বা ছবি প্রকাশ বা ব্যবহার করা যাবে না।