অফিস ডেস্ক
প্রতিবেদন প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৫, সময়ঃ ০২:৫৯
গাইবান্ধার ভেলু রবিদাস (৫৬) পেশায় ক্ষুদ্র চামড়া ব্যবসায়ী। বাড়ি সাদুল্যাপুর উপজেলার কামারপাড়া গ্রামে। আশপাশের এলাকায় ঘুরে তিনি পশুর চামড়া কেনেন। পরে সেগুলো পাইকারদের কাছে বিক্রি করেন। এ বছর তিনি ২২৫টি গরু ও ১৩০টি ছাগলের চামড়া কিনে মজুত করেছেন। প্রতিটি গরুর চামড়া ৯০০ ও ছাগলের চামড়া ২৫০ টাকায় কিনেছেন। গরু ও ছাগলের প্রতিটি চামড়া সংরক্ষণে খরচ পড়েছে গড়ে ২০০ ও ১০০ টাকা করে।
সেই হিসাবে প্রতিটি গরুর চামড়া ক্রয়মূল্য দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১০০ ও ছাগলের ৩৫০ টাকা। এসব চামড়া বিক্রি করতে হবে এর চেয়ে বেশি দামে। কিন্তু বাজারে সেই পরিস্থিতি নেই বলে দাবি করেছেন ভেলু। মোট ২ লাখ ৯৩ হাজার টাকার চামড়া কিনে বিপাকে পড়েছেন তিনি। তবে আশা করছেন, আগামীকাল বুধবার পলাশবাড়ী উপজেলার পশুর চামড়ার হাটে ভালো দাম পাবেন। ওই দিন সেখানে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের আসার কথা আছে।
ভেলু রবিদাস বললেন, ‘দেনা করি ম্যালা ট্যাকার চামড়া কিনি চিনতাত পড়চি। একোনো বেচপ্যার পাই নাই। পাকেররা (পাইকার) কম দাম কয়। কম দামোত বেচলে নচ (লোকসান) হবি। বুদব্যারের দিন (আগামী বুধবার) পলাশবাড়ীত চামড়ার হাট বসপে। সেই দিন নাকি মোনতোরি (বাণিজ্য উপদেষ্টা) আসপে। ওই হাটোত বেচি ভালো দাম পামো। সেই আশা নিয়া আচি। তারপরেও চিনতে, ভালো দাম পামো কিনে।’
প্রায় ৪০ বছর ধরে পলাশবাড়ী উপজেলা সদরে পশুর চামড়া কেনাবেচার হাটটি বসছে। শুরু থেকে প্রতিটি ঈদুল আজহার পর প্রথম বুধবারে এই হাট বসে। এর আগে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনে সংরক্ষণ করেন। আর অপেক্ষায় থাকেন হাটবারের।
চামড়ার হাটটিকে উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্য দাবি করে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গাইবান্ধা ছাড়াও উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সেখানে চামড়া বিক্রি করতে আসেন। হাটের দিন ঢাকা থেকে ট্যানারির মালিকের প্রতিনিধিরা চামড়া কিনে ট্রাকে করে নিয়ে যান।
পলাশবাড়ী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমুল আলম বলেন, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন উপজেলার অস্থায়ী চামড়া সংরক্ষণাগার পরিদর্শনের পাশাপাশি ও স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলবেন।
এদিকে গাইবান্ধায় চামড়া ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, ঈদে পশুর চামড়ার দাম তুলনামূলক কম। বাজারে চামড়া অনেক, কিন্তু ক্রেতা কম। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ধারদেনা করে চামড়া ব্যবসায় লগ্নি করেছেন। সেই চামড়া তাঁরা বিক্রি করতে পারছেন না। চামড়া কিনে তাঁরা বিপাকে পড়েছেন।
চামড়া ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সরকার এবার ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৫০ থেকে ৫৫ টাকা ও ছাগলের চামড়া ১৭ থেকে ২০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা গ্রাম ঘুরে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৬০ থেকে ৬৫ টাকা ও ছাগলের চামড়া ২২ থেকে ২৫ টাকা দামে কিনে বিপাকে পড়েছেন। কারণ, সরকার নির্ধারিত দামে ট্যানারির মালিকেরা চামড়া কেনেন না।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় গাইবান্ধা শহরের ব্রিজ রোডের একটি চামড়ার আড়তে গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিকেরা চামড়ায় লবণ দিচ্ছেন। কেউ ভালো চামড়া বাছাই করে স্তূপ করে রাখছেন। শ্রমিকদের কাজ তদারক করছেন আড়তের মালিক ও চামড়া ব্যবসায়ী আরশাদ আলী। তিনি বলেন, ‘আমি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছে কিছু চামড়া কিনে সংরক্ষণ করেছি। কিন্তু তাঁরা সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে কিনেছেন। ফলে তাঁদের কাছ থেকে বেশি দামে চামড়া কিনতে মহাজনেরা আগ্রহী হচ্ছেন না। এখন সবার ভরসা আগামী বুধবারের পলাশবাড়ীর হাট।’
পলাশবাড়ী চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবছর হাটের দিন ঢাকা থেকে ট্যানারির মালিকেরা চামড়া কিনতে আসেন। তাঁদের চাহিদার ওপর চামড়ার বাজার অনেকটাই নির্ভর করছে।
অন্যদিকে তদারকির অভাবে এ বছর ঈদের আগে লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত অনেক গরু বেচাকেনা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের অনেকেই না বুঝে লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত গরুর চামড়া কিনে বিপদে পড়েছেন।
© North Bangla News ২০২৫ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
সতর্কতাঃ অনুমতি ব্যতীত কোন সংবাদ বা ছবি প্রকাশ বা ব্যবহার করা যাবে না।