অফিস ডেস্ক
প্রতিবেদন প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৫, সময়ঃ ০৩:১৬
সব ভালো কিছুই নাকি কখনো না কখনো শেষ হতে হয়। কথাটা অমোঘ হলেও এমন অনেক কিছুই আছে, যার শেষ মেনে নিতে কষ্ট হয়। শেষের পর তৈরি হওয়া শূন্যতা তাড়া করে বেড়ায় অনেক দিন। আনহেল দি মারিয়ার ইউরোপীয় অধ্যায় শেষ হওয়ার গল্পটাও তেমনই।
এই শেষ ফ্ল্যাশব্যাক মনে করিয়ে দিচ্ছে আনন্দ-বেদনার অনেক মুহূর্তকে। যে মুহূর্তগুলোর যোগফলেই রোজারিওর সাদামাটা দি মারিয়া রূপান্তরিত হন একজন কিংবদন্তিতে। যিনি ইউরোপে পরশু রাতে নিজের শেষটাও করেছেন কিংবদন্তির মতো মাথা উঁচু করে।
ক্লাব বিশ্বকাপ দিয়ে বেনফিকাকে বিদায় জানানোর কথাটা আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন দি মারিয়া। পরবর্তী গন্তব্য হিসেবে শৈশবের ক্লাব রোসারিও সেন্ট্রালের সঙ্গে চুক্তিও সেরে রেখেছিলেন তিনি। যে কারণে ক্লাব বিশ্বকাপে বেনফিকার ম্যাচগুলোর দিকে আলাদাভাবে চোখ ছিল দি মারিয়ার ভক্তদের। গ্রুপ পর্বে তিন গোল করে শীর্ষ গোলদাতার তালিকায় যৌথভাবে সবার ওপরেও ছিলেন বিশ্বকাপজয়ী এই আর্জেন্টাইন।
আরও পড়ুন
দুর্বৃত্তদের হুমকির এক বছর পর শৈশবের ক্লাবে ফিরলেন দি মারিয়া
৩০ মে ২০২৫
দুর্বৃত্তদের হুমকির এক বছর পর শৈশবের ক্লাবে ফিরলেন দি মারিয়া
পাশাপাশি দি মারিয়ার নৈপুণ্যে বায়ার্ন মিউনিখকে টপকে নিজেদের গ্রুপে সবার ওপরেও ছিল বেনফিকা। আশা করা হচ্ছিল, বেনফিকার সঙ্গে দি মারিয়ার এ যাত্রাটা হয়তো আরেকটু দীর্ঘ হবে। কিন্তু তেমনটা হয়নি। চেলসির কাছে ৪-১ গোলে হেরে শেষ ষোলো থেকেই বিদায় নিয়েছে বেনফিকা। কিন্তু হারের আগে দলকে শেষ সুযোগটা এনে দিয়েছিলেন দি মারিয়াই।
চেলসির বিপক্ষে ৬৪ মিনিটে পিছিয়ে পড়া বেনফিকাকে যোগ করা সময়ের শেষ মুহূর্তে সমতায় ফেরান দি মারিয়া। পেনাল্টি থেকে করা তাঁর গোলেই ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। যদিও অতিরিক্ত সময়ে আর পেরে ওঠেনি বেনফিকা। ক্লান্ত দি মারিয়াও শেষ পর্যন্ত মাঠে থেকে বদলাতে পারেননি দলের ভাগ্য। ক্লাব বিশ্বকাপ থেকে বেনফিকার বিদায় একই সঙ্গে ক্লাবটি থেকে দি মারিয়ার বিদায়ও নিশ্চিত করেছে। কান্নায় বিদায় নিলেও ইউরোপকে ১৮ বছরের স্বর্ণালি সব মুহূর্ত উপহার দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। আর নিজে নিয়ে যাচ্ছেন গর্ব করার মতো উজ্জ্বল সব স্মৃতি।
ইউরোপে শেষটা রাঙানো হলো না দি মারিয়ার
ইউরোপে শেষটা রাঙানো হলো না দি মারিয়াররয়টার্স
২০০৭ সালে রোজারিও সেন্ট্রাল থেকে বেনফিকায় ইউরোপ অভিযান শুরু করেন দি মারিয়া। তিন বছরে এই ক্লাবকে লিগ শিরোপাসহ পাঁচটি ট্রফি জিততে সহায়তা করেন দি মারিয়া। বেনফিকায় তাঁর আলো ঝলমলে পারফরম্যান্স নজর এড়ায়নি ইউরোপের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদের। ২০১০ মালে বেনফিকা ছেড়ে রিয়ালে এসে জুটি বাঁধেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর সঙ্গে।
২০১০-২০১৪—এই চার বছরে রিয়ালের হয়ে লা লিগা ও চ্যাম্পিয়নস লিগসহ ছয়টি শিরোপা জিতেছেন দি মারিয়া। ২০১৪ সালে রিয়াল–অধ্যায় শেষ করে দি মারিয়া যান পিএসজিতে। সেখানেও সাফল্য কুড়িয়েছেন দুই হাতে। ২০১৫ থেকে ২০২২—এই ৭ বছরে ৫টি লিগ শিরোপাসহ জিতেছেন ১৯টি ট্রফি। ২০১৯-২০ মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে গিয়েও শেষ পর্যন্ত শিরোপা জেতা হয়নি দি মারিয়ার। ফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখের কাছে ১-০ গোলে হেরে যায় পিএসজি।
আরও পড়ুন
ঝড় ও গোলবন্যার রাতে দি মারিয়া যেখানে শীর্ষে
২১ জুন ২০২৫
ঝড় ও গোলবন্যার রাতে দি মারিয়া যেখানে শীর্ষে
প্যারিসের ক্লাবটিকে বিদায় বলে দি মারিয়া এক মৌসুম ছিলেন জুভেন্টাসে। জুভদের হয়ে অবশ্য কিছু জেতা হয়নি তাঁর। এরপর ২০২৩ সালে চলে যান ইউরোপে নিজের প্রথম ক্লাব বেনফিকায়। সেটাই ছিল মূলত তাঁর শেষের শুরু। পর্তুগিজ ক্লাবটিতে গিয়ে মূলত নিজের বৃত্তপূরণ করেছেন দি মারিয়া। আর এই বৃত্তপূরণের গল্পটি শেষ হলো গতকাল ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ এক রাতে।
যেখানে প্রাকৃতিক ঝড়ও আড়াল করতে পারেনি দি মারিয়ার নিজের ভেতর চলতে থাকা ঝড়কে। যে ঝড় ম্যাচ শেষে মারিয়ার চোখে ঝরেছে অশ্রু হয়ে। দি মারিয়ার কান্নার এই দৃশ্য ছুঁয়ে গেছে ভক্ত–সমর্থকদেরও। ৩৭ পেরোনো দি মারিয়া অবশ্য বিদায় বেলায়ও ক্লাব বিশ্বকাপের এককভাবে সর্বোচ্চ গোলদাতা। টুর্নামেন্টে ৪ ম্যাচে ৪টি পেনাল্টি নেওয়ার সুযোগ পেয়ে প্রতিটিতেই লক্ষ্যভেদ করেছেন তিনি।
হতাশা প্রকাশ করছেন দি মারিয়া
হতাশা প্রকাশ করছেন দি মারিয়ারয়টার্স
ইউরোপিয়ান ফুটবলে আবির্ভাবের পর থেকেই দি মারিয়া ছিলেন আনসাং হিরো। অনেকটা নীরবেই নিজের কাজটা করে গেছেন তিনি। আজ ইউরোপ থেকে সরে দাঁড়ানোর সময়ও চোখে পানিটুকু ছাড়া আর কোনো আয়োজন ছিল তাঁর।
অথচ এই দি মারিয়া আর্জেন্টিনার হয়ে কোপা আমেরিকা, ফিনালিসিমা ও বিশ্বকাপ ফাইনালে গোল করেছেন। ২০১৩–১৪ মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদের চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা ফাইনালেও ম্যাচসেরা হয়েছিলেন তিনি। একই বছর জিতেছিলেন আর্জেন্টিনার বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কারও। যদিও এসব অর্জনকে কখনোই বিজ্ঞাপন হিসেবে ব্যবহার করেননি এ উইঙ্গার।
বাস্তবতা হচ্ছে, চাওয়া–পাওয়ার সব লেনদেন মিটিয়ে ইউরোপে এখন অতীত হয়ে গেলেন দি মারিয়া। জাতীয় দলকে বিদায় বলেছিলেন গত বছর কোপা আমেরিকা জিতেই। এখন বাকি শুধু যে রোজারিও সেন্ট্রালের হয়ে শুরু করেছিলেন, সেখানে গিয়ে বিদায়ী বিউগলটা বাজানোর। সেটাও হয়তো বরাবরের মতো নীরবেই বাজিয়ে আড়ালে চলে যাবেন দি মারিয়া।
© North Bangla News ২০২৫ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
সতর্কতাঃ অনুমতি ব্যতীত কোন সংবাদ বা ছবি প্রকাশ বা ব্যবহার করা যাবে না।